রহস্যময়ী সেই মিতা-রিতাকে নিয়ে জটিল সন্দেহের ডালপালা
লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ২৪ জুন, ২০১৩, ১১:২৫:২৯ সকাল
দেশের বহুল আলোচিত মানষিক ভারসাম্যহীন দুই বোন প্রকৌশলী নুরুন নাহার মিতা (৫০) ও ডাক্তার আইনুর নাহার রিতা (৪৮) কে নিয়ে দীর্ঘদিন পর আবার হৈচৈ পড়েছে। ঢাকায় তোলপাড় তোলার পর দীর্ঘ প্রায় অর্ধযুগ নিরব থেকে আবার এই রহস্যময়ী দুই বোন আলোচনায় এসেছেন। পুলিশ দীর্ঘদিন পর রোববার বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেল’র কক্ষ থেকে উদ্ধারের পর এসব জটিল সন্দেহ ডাল পালা ছড়াচ্ছে। যদিও তাদের উদ্ধারের পর মানবাধিকার কর্মী ও মহিলা আইনজীবী সমিতি বগুড়ার বারপুর প্রতিবন্ধী নারী প্রশিণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে হস্তান্তর করেছে তবু তাদের রহস্যময় জীবন যাপনের নানা কাহিনী এখন লোকের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষই মনে করছেন প্রখর মেধাবী এই দুই বোন মানসিক ভারসাম্যহীনতার অভিনয় করে বড় ধরনের অপরাধমুলক এবং গোপন কোন কারবারের সঙ্গে জড়িত।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ঢাকার মীরপুরে এক ডাক্তার বন্ধু রিতা রিতা মিতা কে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ওই সময় চিকিৎসকরা ডাক্তার রিতা ও প্রকৌশলী মিতা কে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। পরে আর তাদের সম্পর্কে আর কেউ খোঁজ খবর রাখেনি। সেই ঘটনার পর রোববার বগুড়ায় তাদের উদ্ধারের ঘটনা বষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে সবাইকে।
অনুসন্ধিৎসু মানুষের ধারনা সাংঘাতিক মেধাবী এবং চতুর এই দুই বোন আন্তর্জাতিক কোন গোয়েন্দা সংস্থার স্পাই হিসেবে কাজ করেন। তারা মানসিক ভারসাম্যহীনতার ভান করে এতদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। অনেকেই মনে করছেন এদের সাথে প্রশাসনেরও একটা যোগসুত্র রয়েছে। কেননা,বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলে তিনমাস ধরে দুজন মহিলা থাকছেন অথচ সেই হেটোলের সঙ্গে জোড়া লাগানো বগুড়া সদর থানার পুলিশ কোনই খোজ খবর পায়নি ?আর সেই আকবরিয়া হোটেলের কর্তৃপক্ষের কথাবার্তাও সন্দেহ জনক। কারন তিনমাস ধরে একটা আবাসিক হোটেলে মানসিক ভারসাম্যহীন দু’জন মহিলা কিভাবে থাকে। তাদের খাওয়া দাওয়া চলাফেরা সবইতো সন্দেহজনক হবার কথা। আর তিনমাস ধরে তারা বগুড়ার হোটেলে থেকে কী এমন কাজ করছেন যা নিয়ে আর কারো না হোক হোটেল কর্তৃপক্ষের মাথা ব্যাথা হবার কথা।
আবার একসপ্তাহ ধরে তারা হোটেল কক্ষের দরজা বন্ধ করে আছে হোটেল ম্যানেজারের এমন বক্তব্যও গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা। দুজন মহিলা একদিন হোটেলের দরজা বন্ধ করে থাকলেই তো তাদের খোজ নেয়ার কথা। সেখানে তারা একসপ্তাহ ধরে বন্ধ দরজা একবারও খোলার চেষ্টা করলেন না কেন।
আরো প্রশ্ন উঠেছে প্রতিদিন একহাজার টাকা হোটেল ভাড়া দিয়ে তিনমাস থাকা এবং দুজনের খাওয়া খরচের এই বিশাল অংকের টাকা তারা কোথায় পাচ্ছিলেন? তাদের আয়ের উৎস কী ? এ প্রশ্ন হোটেল ম্যানেজারেরও থাকা উচিৎ ছিল। কারন তারা যদি মানসিক ভারসাম্যই হতো তাহলে তিনমাস অবস্থানের পরও কেউ কী তাদের এই অবস্থা টের পাননি? অথবা কারো কী মনে প্রশ্ন জাগেনি যে প্রতিদিন এত টাকা এরা কোথায় পাচ্ছে ? এসব নানা প্রশ্নের ঘুরে ফিরে একটাই উত্তর আসছে এরা নিশ্চয় কোন গোপন কারবারের সঙ্গে জড়িত।
বগুড়া সদর থানার এস আই আনোয়ার হোসেন জানান, প্রায় তিন মাস যাবত বগুড়া আকবোরিয়া আবাসিক হোটেলের ২১ নং কক্ষে তারা দুই বোন ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে কক্ষ ভাড়া না দেয়ায় ম্যানেজার তাদেরকে অবহিত করেন।
ম্যানেজার আরও জানান, দুই জন মহিলা বোর্ডার এক সপ্তাহ যাবত তারা ভাড়া পরিশোধ না করে হোটেল করে দরজা বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান করছিল। খবর পেয়ে গতকাল রোববার দুপুরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, এসময় রিতা ও মিতার অসংলগ্ন কথা বার্তা, আচারণ, তাদের চেহারা ইত্যাদি দেখে পুলিশের অনুমান হয়, ওরাই সেই ঢাকার কল্যাণ পুরের অধিবাসী বহুল আলোচিত দুই সহোদর বোন মানষিক ভারসাম্যহীন রিতা ও মিতা। মূহত্বেই মানবাধিকার কর্মীসহ সব মহলে তোলপাড়া শুরু হয়।
মহিলা আইনজীবী সমিতির নেত্রী এ্যাড. লাইলার পরামর্শ ক্রমে তাদেরকে হোটেল ক থেকে উদ্ধার করে বগুড়া সামাজিক প্রতিবন্ধী নারী প্রশিণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে প্রেরণ করা হয়।
সাংবাদিক,পুলিশসহ সব মহলের ধারনা, রিতা ও মিতার গ্রামের বাড়ি ব্রাণবারিয়া।তবে ঢাকার মিরপুরের বাড়ি সম্পর্কে কোন কথা বলতে তারা রাজি হননি।
ডাক্তার রিতার বড় বোন প্রকৌশলী মিতা জানান, তারা ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদেরকে বিরক্ত করা যাবে না। এর আগেও তাদেরকে নিয়ে ইলোকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক সংবাদ প্রচার হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ওসি সৈয়দ শহিদ আলম বলেন, সম্মাানের সাথে তাদেরকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। এখানে প্রশ্ন জেগেছে তারা ঢাকা থেকে এতদিন কোথায় অন্তরীন ছিলেন এবং বগুড়ায় কেন এবং কীভাবে এলেন। তাদের আয়ের উৎসই বা কী ? প্রশাসন এসব প্রশ্ন তাদের কেন করছে না সেটাই একটা বড় সন্দেহ। তাছাড়া তারা যদি মানসিক ভারসাম্যহীনই হবে তাহলে তাদের তো হাসপাতালে থাকার কথা। তা না করে পুলিশ তাদের সম্মানজনক ভাবে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে রেখেছে কেন? এসব জটিল সন্দেহ আর নানা রহস্যে আবার ঘুরপাক ক্ষেতে শুরু করেছে রহস্যময়ী রীতা মিতার নতুন মিশন।
বিষয়: Contest_mother
২৭৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন